নিজস্ব প্রতিবেদক
কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া দিয়েই লোকসান গুনছে কৃষক
বাংলাদেশের কৃষিতে সবচেয়ে বেশি চাষকৃত সবজি হলো আলু। প্রতিবছর উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলেও বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, রপ্তানির সীমাবদ্ধতা এবং কোল্ডস্টোরেজ ভাড়ার বোঝা কৃষকের জন্য আশীর্বাদের বদলে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে।
---
উৎপাদন খরচ বনাম বাজারমূল্য
মাঠ পর্যায়ে আলু উৎপাদনে খরচ: ১২-১৪ টাকা/কেজি
কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া ও বিদ্যুৎ খরচ: ৩-৪ টাকা/কেজি
মোট খরচ: ১৬-১৮ টাকা/কেজি
মৌসুম শেষে পাইকারি বাজার মূল্য: ১০-১২ টাকা/কেজি
👉 প্রতি কেজি আলুতে লোকসান: ৪-৬ টাকা
---
কোল্ডস্টোরেজের বাণিজ্যিকীকরণ
দেশে প্রায় ৪০০-এর বেশি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী মহল। কৃষক আলু রাখলেও পরবর্তী সময়ে দামের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে থাকে না। অনেক সময় কোল্ডস্টোরেজ মালিকরাই কৃষকের আলু কিনে মজুদ করে পরবর্তীতে বেশি দামে বিক্রি করেন।
---
রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া
বাংলাদেশে উৎপাদন: ১ কোটি টন (প্রায়)
জাতীয় চাহিদা: ৭০-৭৫ লাখ টন
উদ্বৃত্ত: ২৫-৩০ লাখ টন
রপ্তানি: ১-১.৫ লাখ টন
ভারত প্রতিবছর ২০-২৫ লাখ টন আলু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে, অথচ বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও বাজার চুক্তির অভাবে পিছিয়ে রয়েছে।
---
সমাধানের পথ
১. ন্যায্যমূল্য ঘোষণা – ধানের মতো আলুরও সরকারিভাবে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ।
২. রপ্তানি সম্প্রসারণ – মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বাজার ধরতে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ।
৩. প্রক্রিয়াজাত শিল্প – আলুর চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ফ্লেক্স ইত্যাদি উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা।
৪. কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া কমানো – কৃষকদের জন্য ভর্তুকি ভিত্তিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
৫. সরাসরি কৃষক-ভোক্তা সংযোগ – অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বা সমবায় মার্কেট চালু করা।
---
উপসংহার
আজকের বাস্তবতায় আলু কৃষকের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। উৎপাদনে খরচ ১৬-১৮ টাকা, কিন্তু বিক্রিতে পাচ্ছেন মাত্র ১০-১২ টাকা। এর দায় শুধু বাজারব্যবস্থার নয়, বরং কৃষি নীতির ব্যর্থতা।
আলু বাঁচাতে হলে কৃষককে আগে বাঁচাতে হবে। নইলে কৃষক আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ হবে।
✦ বক্স ইনফো:
উৎপাদন: ১ কোটি টন
চাহিদা: ৭০-৭৫ লাখ টন
উদ্বৃত্ত: ২৫-৩০ লাখ টন
রপ্তানি: মাত্র ১-১.৫ লাখ টন
লোকসান: ৪-৬ টাকা/কেজি
লেখক,কলামিস্ট,গবেষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক