প্রতিনিধি সরিষাবাড়ী জামালপুর।
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মোঃ আমজাদ হোসেন আর নেই। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরের একজন বীর
মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার এ অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে।
আমজাদ হোসেন ৩১আগস্ট ঢাকায় সিএম এইচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৯১বছর।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ডোয়াইল ইউনিয়নের ডিগ্রিবন্ধ এলাকায় নিজবাড়ীর পারিবারিক গোরস্থানে প্রশাসন ও
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোহছেন উদ্দিন মরণোত্তর সম্মান ও মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র, তিন কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তার মৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
পরিবার সুত্রে জানা যায়, আমজাদ হোসেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ছুটিতে দেশে এসে পাকিস্তানে ফিরে না গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি প্রথমে সিগন্যাল ও কমিউনিকেশন অপারেশন এর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মহেন্দ্রগঞ্জ ও কামালপুর এবং সিলেট সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে ফোর্ট উইলিয়ামে বন্দী রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানীর সুপারিশে তিনি মুক্তি পান। তিনি কামালপুর সীমান্তে সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের পরাজিত করতে অসামান্য সাহসিকতার পরিচয় দেন। এ ঘটনাটি সে সময়কার দৈনিক “দ্য ডন” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরে যোগদান করেন এবং ১৫ বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন।
তিনি ১৯৮৬ সালে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২য় সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন হতে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে বর্ণাঢ্য চাকুরী শেষে, অত্যন্ত সম্মানের সাথে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগে সাত বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় ১৯৭১ সালের পূর্বে ৫টি [ক্লাপস কাশ্মীর, সিতারা হারব, রান অব কচ, নিরাপত্তা পদক ও তগমা ই জং ] এবং স্বাধীনতার পর আরও ৫টি পদক [সমরাভিযান তারকা, সমর পদক, স্বাধীনতা তারকা, জয় পদক ও সংবিধান পদক] অর্জন করেন।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন পেশাগত জীবনে অত্যন্ত সফল দুই পুত্র ও তিন কন্যাসন্তানের জনক। তাঁর বড় ছেলে জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমান আমেরিকার ফ্লোরিডায় স্থায়ী নাগরিক স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বড় মেয়ে আলেয়া আক্তার অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধরি এবং বর্তমানে সরকারী তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক (১৪তম বিসিএস), দ্বিতীয় মেয়ে আসমাউল হুসনা পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং বর্তমানে একটি স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন, তৃতীয় মেয়ে উম্মে কুলসুম অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে কর্মরত, ছোট ছেলে ড. মোঃ মামুনুর রশীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
তাঁর বড় মেয়ের জামাতা আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে রিয়ার অ্যাডমিরাল পদে, দ্বিতীয় মেয়ের জামাতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে এবং তৃতীয় মেয়ের জামাতা সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বড় ছেলের পুত্রবধূ জেবুন্নেসা বেগম স্নাতক ডিগ্রিধরি এবং ছোট ছেলের পুত্রবধূ নাহার সুলতানা একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এবং আমেরিকাল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-তে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে জনাব মোঃ আমজাদ হোসেন ছিলেন অত্যন্ত সৎ, সামাজিক ও সাহায্যপ্রবণ মানুষ। তাঁর সততা, মানবিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ তাঁকে সবার কাছে একজন প্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। পরবর্তীতে জানাজা নামাজের পূর্বে মরহুমের ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মামুনুর রশীদ এর সঞ্চালনায় আলোচনার মাধ্যমে মরহুমের রুহের জন্য দোয়া চান পরিবারের সদস্যবৃন্দরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল আজিজ
০১৭১৫-৮৬৮৬৬৮