মাহবুব জিলানী গাজীপুর থেকে :
গাজীপুরের গাছায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বর্ণাঢ্য গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বাণিজ্য মেলা । স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং গ্রাম-নগরের অর্থনীতিকে চাঙা করার উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সকালে কতৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলা শুরু হওয়া মেলায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের ভিড় জমছে।
মেলায় ৯০ টিরও বেশি স্টল রয়েছে, যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে স্থানীয়ভাবে তৈরি নানান হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের পণ্য। মাটির শোপিস, বাঁশ-বেতের তৈরি সামগ্রী, গৃহস্থালি ব্যবহার্য দ্রব্য, শাড়ি-থ্রি-পিস, খেলনা এবং গহনার মতো নানান পণ্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। পাশাপাশি রয়েছে খাবারের স্টল, যেখানে দেশীয় পিঠা, চিতই, পাটি সাপটা, চা এবং হালকা নাশতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুধু কেনাকাটাই নয়, বিনোদনের বৈচিত্র্যও মেলার মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। সার্কাস, নাগরদোলা, দোলনা নৌকা, ভূতের বাড়ি, ঝুলন্ত ট্রেন ও শিশুদের জন্য বিভিন্ন রকমের খেলার ব্যবস্থা থাকায় সব বয়সী মানুষ আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন এখানে।
সন্ধ্যা নামতেই আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ, চারদিকে শোনা যায় গান-বাজনা আর দর্শনার্থীদের হাসি-আনন্দে মুখরিত পরিবেশ।
মেলার আয়োজক মো. মহিউদ্দিন খান বাবলু জানান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মেলাটি সুষ্ঠুভাবে চলছে। শিশু থেকে বৃদ্ধসবাইকে বিনোদনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “গ্রামবাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে হস্ত ও কুটির শিল্পের বিকল্প নেই। মানুষের সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটে এসব শিল্পে, আর আমরা সেটিই মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।” তিনি আরও জানান, প্রতিদিন লাকি কুপনের মাধ্যমে লটারির আয়োজন করা হয় এবং বিজয়ীদের হাতে সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়, যা দর্শনার্থীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বাড়িয়ে তুলছে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে এখানে এসে যেন গ্রামের এক টুকরো আবহ খুঁজে পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য রয়েছে খেলার বিস্তর ব্যবস্থা, তরুণদের জন্য রাইভস আর বড়দের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা। স্থানীয় শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, “এমন মেলা শুধু বিনোদন নয়, শিশুদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে।
তারা গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হয়, যা তাদের মানসিক বিকাশে সহায়ক।” ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই মেলার মাধ্যমে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও সক্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে নারীরা নিজেদের তৈরি পোশাক, হস্তনির্মিত গহনা ও গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রি করে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
মেলার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে গাজীপুরের গাছা এলাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামতেই উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ এখানে ছুটে আসছে। আয়োজক মো. মহিউদ্দিন খান বাবলু আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এই মেলা শুধু গাজীপুর নয়, আশপাশের এলাকাতেও বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও মানুষকে আনন্দ দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।