নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাধীনতা—এই শব্দটি আমাদের কাছে এক পবিত্র মন্ত্র, এক অগ্নিঝরা ইতিহাস। এই স্বাধীনতার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে, ঘরবাড়ি ছেড়েছে, বুক চিরে রক্ত ঢেলেছে। একটিমাত্র আকাঙ্ক্ষা—স্বাধীনতার স্বাদ পাবো, মুক্তির নিশ্বাস নেবো। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন জাগে, সেই স্বাধীনতা কি সত্যিই জনগণের হাতে পৌঁছেছে? নাকি তা বন্দি হয়ে গেছে সাংবাদিকদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনের গ্যালারিতে আর নির্বিকার প্রশাসনের মগজে?
সাংবাদিকতার দায়িত্ব ছিল জনগণের কণ্ঠস্বর হওয়া, সত্যকে প্রকাশ করা, ক্ষমতার মুখোশ ছিঁড়ে বাস্তবকে সামনে আনা। কিন্তু আজ আমরা কী দেখি? স্বাধীনতার সংগ্রাম, বিপ্লবের মুহূর্ত, সত্যের চিত্র—সবই ক্যামেরায় বন্দি হয়ে পড়ে থাকে গ্যালারিতে। সেগুলো কখনো প্রকাশিত হয় না, কখনো বিক্রি হয়ে যায় বিজ্ঞাপন আর স্পন্সরশিপের কাছে। সাংবাদিকরা অনেকেই কলমের শপথ ভুলে গিয়ে ক্ষমতার কাছে নিজেদের সত্য বিক্রি করে দেন। ফলে স্বাধীনতা রয়ে যায় ছবির মধ্যে, রয়ে যায় অপ্রকাশিত ভিডিওতে, কিন্তু জনগণের জীবনে তার কোনো প্রতিফলন ঘটে না।
অন্যদিকে প্রশাসন—যারা জনগণের সেবক হওয়ার কথা ছিল—তারা আজ নির্বিকার। দেশের প্রতিটি অন্যায়, প্রতিটি অবিচার, প্রতিটি দুর্নীতি তারা চোখ বন্ধ করে দেখে। যেন জনগণের আর্তনাদ তাদের কানে পৌঁছায় না। জনগণের রক্ত, ত্যাগ আর ইতিহাস তাদের মগজে কেবল তথ্যের খাতায় জমা থাকে, কিন্তু কোনো দায়িত্ববোধ জাগায় না। স্বাধীনতা যদি প্রশাসনের কাছে কেবল নথিপত্র আর সিদ্ধান্তের খেলায় পরিণত হয়, তবে জনগণ আসলে শৃঙ্খল ভাঙলেও মুক্ত হতে পারে না।
স্বাধীনতার আসল স্বাদ কোথায়? সেটি তো মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার কথা ছিল। স্বাধীনতার মানে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, সবার জন্য সমান সুযোগ। কিন্তু আমরা কি তা পেয়েছি? না। আমরা পেয়েছি ভয়, নিপীড়ন আর বঞ্চনা। জনগণ আজও ভয়ে সত্য বলতে পারে না, সাংবাদিকরা সত্য লুকিয়ে রাখে, প্রশাসন অন্যায়ের সঙ্গী হয়। স্বাধীনতা তাই কেবল স্লোগানের, স্মৃতির আর দিবস পালনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন? স্বাধীনতা যদি কেবল গ্যালারিতে বন্দি থাকে, তবে এ স্বাধীনতা জনগণের নয়, কেবল প্রহসন। আমাদের আবার জেগে উঠতে হবে, আবার মনে করাতে হবে যে স্বাধীনতা কোনো স্মৃতির নাম নয়, এটি জীবনের বাস্তবতা। স্বাধীনতা মানে সত্য প্রকাশ, ন্যায় প্রতিষ্ঠা, মানুষের হাসি।
আমরা চাই সেই বাংলাদেশ, যেখানে সাংবাদিকতার কলম বিক্রি হবে না, ক্যামেরা সত্য লুকাবে না। আমরা চাই সেই প্রশাসন, যারা নির্বিকার থাকবে না, বরং জনগণের পাশে দাঁড়াবে। আমরা চাই সেই স্বাধীনতা, যা জনগণের ঘরে পৌঁছাবে, জীবনে আলো ছড়াবে। স্বাধীনতা বন্দি নয়, স্বাধীনতা মুক্ত হবে মানুষের হাসিতে, সাহসে আর সংগ্রামে।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর