কামরুল হাসান :
কোন বিষয় সম্পর্কে প্রচার বা প্রকাশের মূল হেতু বা কারনই হলো ওই বিষয়ের ঘটনা। আবার কোন ঘটনা যখন নানা মাধ্যম বা লোকমুখে প্রকাশ পায়, তখন তাকে রটনা বলে। সমপ্রতি দক্ষিণ জামালপুরের কয়েকটি ঘটনা সংঘটিত হয়ে রীতিমত প্রকাশ পেয়ে রটনায় পরিনত হয়েছে।
গত ৬ আগস্ট জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের করগ্রাম সাইতানী পাড়ার আবদুল ওয়াদুদ ওরফে গুদুর নাতনী ও হারুনের মেয়ে তামান্ন কে একই গ্রামের মুন্সীবাড়ির কাফির নাতি ও একই ইউনিয়নের বড়সরা গ্রামের মৃত আ: রশিদ ওরফে চান মিয়ার ছেলে রিয়াদ ফুসলিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে রিয়াদের কথিত দুলাভাই একই ইউনিয়নের রাজিব দিয়ার গ্রামের চাল বেপারী আ: আজিজের ছেলে আবু সাইদ সহযোগিতা করে। এ ঘটনায় মেয়ে পক্ষ রিয়াদ, আবু সাইদ ও তামান্নার বিরুদ্ধে সরিষাবাড়ি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। গত ১০ আগস্ট দুপুরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের বাঁশবাড়ী গ্রামের জামাল উদ্দিন ওরফে ভুট্টোর মেয়ে রিতু (২৪)-কে তার স্বামীধন মুকুল (৩০) বটিদা দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। এর কারন হিসেবে জানা যায়, মুকুল ও রিতু ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরী করতো। বেশ কিছু দিন আগে থেকে মুকুল চাকরী না করে স্ত্রীর রোজগারের টাকা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেয়াসহ জুয়া খেলে আর নেশা করে ওড়ায়। রিতু এর প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে মুখে ৩ তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি পাঠায়ে দেয় মুকুল। হঠাৎ মুকুল ঘটনার দিন রিতুদের বাড়ি এসে রিতুকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে জোর করে। কিন্তু রিতু মারধর করে মুখে তালাক আবার নিতে আসার বিষয়ের কড়া প্রতিবাদ করে। সেই সাথে সে কোন মতেই মুকুলের ঘরও করবে না আর তার বাড়িও যাবে না বলে জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুকুল এ ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে আটক করে আইনমত জেল হাজতে পাঠায়। মুকুল একই সরিষাবাড়ী পৌরসভাধীন পঞ্চবীর গ্রামের ছইঞ্ছা সেকের ছেলে। রিতু বর্তমানে সে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত ১৩ আগস্ট রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের সেঙ্গুয়া গ্রামের কেছমত আলী ওরফে দুইম্যা’র ছেলে শাজাহান আলী পাশের গ্রাম সানাকইর দক্ষিন পাড়ার ঢাকায় অবস্থানকারী সাইফুল ইসলামের ঘরে ঢুকে। এ ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাদল দোকানদার শাজাহান আলীকে আটকিয়ে মারধর করে। তখন সব ঘটনা খুলে বলে নিজের দোষ স্বীকার করে। পরে নগদ ৫০ হাজার টাকা নজরানা দিয়ে দায় থেকে রেহায় পায় সে। তারপর সাইফুলের পরিবারের উপর একের পর এক হুমকি আসতে থাকে। পরদিন সকালে একটি মহলের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। যত দিন না ধার্যকৃত টাকা না দিবে ততদিন বাড়ী আসতে পারবে না। টাকা দেবার ক্ষমতা নেই বলে অগত্যা ওই পরিবারের সবাই বাঁশবাড়ী আশ্রয় নিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, হায় রে আজব দেশের আজব কান্ড! আজব সব বিচার-আচার। গত ১৭ আগস্ট রাতে রফিকুল বেপারীর স্ত্রী (৫ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে তালাক/৩টি নোটিশ প্রাপ্ত ) হঠাৎ বাড়ী এসে ওঠে। সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের বিধি-নিষেধ তোয়াক্কা না করেই দিব্যি সংসার ধর্ম পালন করছে। সমাজপতি, দলপতি ও ধার্মিকগণ চোখে ঢুলি পরে আর কানে তুলা গুজে গায়ে লুবান মেখে ফুরফুরে মেজাজে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আ-হা-রে সমাজপতি, দলপতি ও ধার্মিকগনের দরদী মন রে! ওই দম্পত্তির প্রতি তাদের দরদ যেন এক্কেবারে উতলিয়ে পড়ছে। না কি তলে তলে ভালো মন্দ আয়োজনে মেহমান হয়েছিল। এমনটা ভাবা এক্কেবারে অহেতুক হবে না। ভাই, অত সব বুঝিনা। সাফ কথা- যদি তা-ই না হবে, তাহলে এমন হেন কাজের নূন্যতম প্রতিবাদ কই? গত ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহাদান ইউনিয়নের করবাড়ী মুরাদের দোকানের নিকট ব্যাটারী চালিত আটো ও আটো ভ্যানের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ইব্রাহীম হোসেন সঞ্চয় (১৭) নামের এক তরুণ (অটো যাত্রী) নিহত হয়। গত ২৩ আগস্ট সকালে জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামের মৃত আব্দুছ ছাত্তারের ছেলে নোমান (৩০) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্ম হত্যা করেছে। কারন হিসেবে জানা গেছে-সে তার নামীয় জমি বিক্রির জন্য সাইনবোর্ড লাগাতে যায়। এ সময় জেঠাতো ভাই মামুন, মাসুদ, মেহেদী ও মুরাদ তাদের জমি বলে দাবি করে বাঁধা প্রদানসহ মারধর করে। এর জেরে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয়রা জানায়, এর মূল নায়ক হলো নোমানের বড় জেঠা বিলাত আলী মাস্টারের ছেলে সাইফুল মাস্টার। এর কারন হিসেবে তারা জানায়-সাইফুল মাস্টার তার চাচাতো ভাইদের জমা-জমি তার নিজের নামে খারিজ করে বেচে দিয়েছে। সম্প্রতি এ কথা জানা জানি হলে তাদের মধ্যে জমি দখল ও রক্ষার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে এ কান্ড ঘটে।
কামরুল হাসান
০১৯১৪-৭৩৫৮৪২)