নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের বৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা ফার্টিলাইজার কোং লিঃ (জেএফসিএল)-এ গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ২০ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে ইউরিয়া উৎপাদন।
এতে করে যমুনা সার কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় চলতি আমন মৌসুমে ইউরিয়া সার সংকটের আশঙ্কায় রয়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। দীর্ঘদিন এই উৎপাদনশীল লাভজনক কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন কারখানার সাথে জড়িত প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। যমুনায় উৎপাদন বন্ধের পর থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এলাকাবাসী গ্যাস সংযোগ দিয়ে কারখানার উৎপাদন চালুর দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসেই কেটে গেছে ২০ মাস। এরপরেও উৎপাদন চালু না হওয়ায় আবারো শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে যমুনা সার কারখানার প্রধান ফটকের সামনে পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ ফকিরের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি চান মিয়া চানু, সদস্য রাশেদুজ্জামান লিটন ফকির, সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান ফরহাদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি লিটন তালুকদার, আওনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুরুজ মেম্বার, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল খালেক, শ্রমিক নেতা আব্দুল মোত্তালেব প্রমুখ।
কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগের ১৬টি জেলাসহ ২১টি জেলার সারের চাহিদা মিটিয়ে আসছে এ কারখানাটি। দেশের সকল জেলার ব্যবহার উপযোগী যমুনার সারের চাহিদাও বেশি। অপরদিকে কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানার সাথে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ে এলাকার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। কারখানার চাকা ঘোরার সাথে সাথেই ঘোরে তাদের জীবন ও জীবিকা, আর বন্ধ হলে থমকে যায় সেই সকল শ্রমিকদের জীবিকাও। দীর্ঘ সময় কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।
অন্যদিকে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় কারখানায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হারে ২০ মাসে ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলতি মাসেই যদি কারখানা চালু না করা হয় তাহলে আমন পিক সিজনে সার সংকটে পড়বেন অনেক কৃষক।
কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯১ সালে ইউরিয়া উৎপাদনে যায় জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা। সেই থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০/৪৫০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানীতে সার উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। এ জন্য সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সার কারখানায় গত ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী। এরপর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে কারখানা সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানাটির নির্মাণকারী জাপানী প্রতিষ্ঠান (এম এইচ আই) ২৫ বছরের সক্ষমতার কথা বললেও ভালো কাজের ফলে কারখানার বয়স ৩৪ বছর অতিবাহিত হলেও কারখানায় এখনো নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হলে বছরে ৪ লাখ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করতে সক্ষম হবে কারখানাটি। এতে করে বিদেশ থেকে সার আমদানী করতে হবে না সরকারকে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রাতেও লাভবান হবে সরকার।