নিজস্ব প্রতিবেদক
বিপ্লব—শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে ভেসে ওঠে পরিবর্তনের জোয়ার, স্বাধীনতার স্বপ্ন আর মানুষের মুক্তির আহ্বান। ইতিহাসে যত বড় রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তর ঘটেছে, তার অধিকাংশের পেছনেই ছিল কোনো না কোনো বিপ্লবের হাতছানি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিটি বিপ্লব তার ঘোষিত লক্ষ্য ও কাংখিত সুফল এনে দিতে পারেনি। বরং অনেক সময় নতুন শাসনব্যবস্থা পুরনো শোষণের ছায়া নিয়ে ফিরে এসেছে।
বিপ্লবের সূচনা: আশা ও প্রত্যাশা
যে কোনো বিপ্লব শুরু হয় তীব্র অন্যায়, বৈষম্য ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণমানুষের ক্ষোভ থেকে। স্বাধীনতা, সমতা, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের শপথ নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামে, প্রাণ দেয়, রক্ত ঝরায়। নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যে উঠে আসে—
"আমরা একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়ব",
"মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেব",
"দুর্নীতি ও বৈষম্যের অবসান ঘটাব"।
কিন্তু বিজয়ের পরের বাস্তবতা প্রায়ই ভিন্ন চিত্র আঁকে।
কেন আসল সুফল পাওয়া যায় না
১. ক্ষমতার লড়াই
বিপ্লবের পর নতুন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী প্রায়ই নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনের সময় যে ঐক্য ছিল, তা ভেঙে যায় ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে।
২. অদক্ষ নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার অভাব
বিপ্লব সফল করতে যে ত্যাগ ও সাহস দরকার, দেশ চালাতে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষতা, নীতি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। অনেক সময় নেতা গড়া হয় সংগ্রামে, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাদের থাকে না।
৩. পুরনো ব্যবস্থার পুনরুত্থান
বিপ্লবের পর পুরনো প্রশাসনিক কাঠামো ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোকে সংস্কার না করলে তারা আবার ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরে আসে। এতে নতুন শাসনব্যবস্থা পুরনো রূপ ধারণ করে।
৪. জনতার প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ফাঁরাক
জনগণ বিপ্লব থেকে তাৎক্ষণিক উন্নতি চায়—খাদ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য। কিন্তু অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠন সময়সাপেক্ষ। এই দেরি জনমনে হতাশা তৈরি করে।
৫. বহিরাগত প্রভাব ও হস্তক্ষেপ
বিদেশি শক্তি প্রায়ই নতুন সরকারকে নিজের স্বার্থে প্রভাবিত করে, ফলে স্বাধীন নীতি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয়।
ফলাফল: আশা থেকে হতাশায়
বিপ্লবের পর যদি দুর্নীতি, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক প্রতিশোধ চালু হয়, তবে মানুষের মধ্যে তীব্র হতাশা তৈরি হয়। যে দেশ শোষণমুক্তির জন্য রক্ত দিয়েছিল, সেখানেই আবার ভিন্ন রূপে শোষণ ফিরে আসে।
আমাদের শিক্ষা
বিপ্লবের সাফল্য নির্ভর করে বিপ্লব-পরবর্তী রাষ্ট্র কাঠামো কতটা স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় তার ওপর।
জনগণের অংশগ্রহণ, সুশাসন, ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া বিপ্লব শুধু নেতৃত্ব বদলের নাম হয়ে দাঁড়ায়।
বাস্তবায়নযোগ্য নীতি ও কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া মুক্তির স্বপ্ন পূর্ণতা পায় না।
উপসংহার
বিপ্লবের প্রকৃত সাফল্য কেবল পতাকা পরিবর্তন নয়, বরং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। তাই বিপ্লবকে শেষ লক্ষ্য না ভেবে, সেটিকে হতে হবে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের সূচনা বিন্দু। অন্যথায় ইতিহাস বারবার প্রমাণ করবে—
“বিপ্লবের কাংখিত সুফল পেল না দেশ।”
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর