নিজস্ব প্রতিবেদক
ইতিহাসে জুলাই মানেই আন্দোলন, বিপ্লব, রাজপাট উল্টে দেওয়া—১৮৩০ সালের ফরাসি জুলাই বিপ্লব আজও প্রমাণ করে যে, জনতার রোষের কাছে মুকুট-রাজদণ্ড টিকতে পারে না। মানুষ রাস্তায় নেমে রাজা তাড়িয়ে দিল, ক্ষমতা ছিনিয়ে নিল, আর লিখে দিল গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়।
কিন্তু বাংলাদেশে জুলাই মানে?
এখানে রাজপাট উল্টানোর বদলে রাজপাট পুনর্বিন্যাস হয়—শুধু চেয়ার বদলায়, চেয়ারম্যান নয়।
জুলাই ঘোষণা পত্র: বিপ্লবের ভঙ্গি, বাস্তবে কাগজের ফুলঝুরি
প্রতি জুলাই এলেই কিছু রাজনৈতিক দল এমন ঘোষণা পত্র দেয়, শুনলে মনে হয়—এবার বুঝি আরেকটা জুলাই বিপ্লব হতে যাচ্ছে, তবে রক্ত ছাড়াই। দুর্নীতি যাবে, উন্নয়ন আসবে, গণতন্ত্র ফুলে-ফলে উঠবে—এমন প্রতিশ্রুতির আতশবাজি ছোঁড়া হয় যেন ভোটাররা আলোয় চোখ ঝলসে যায়।
কিন্তু ঘোষণার পরের কাহিনি ফরাসি বিপ্লবের মতো নাটকীয় নয়—এখানে মঞ্চে নায়ক-নায়িকা ঠিকই থাকে, শুধু সংলাপ বদলে যায়।
ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন: বিপ্লবের ভাষার শেষকৃত্য
ঘোষণার রঙ শুকানোর আগেই শুরু হয় ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন। কে কোন আসন পাবে, কার লোককে জিতিয়ে দেওয়া হবে, কে ভোটে লড়বে, আর কে ভোটে ‘অভিনয়’ করবে—সব ঠিক হয়ে যায় দরজার আড়ালে।
এখানে জনতার ভোটের কাগজ থাকে ঠিকই, কিন্তু সেটা অনেক সময় কনট্রাক্ট পেপার মাত্র—সই আগেই হয়ে গেছে, শুধু নাটকের শেষ দৃশ্যে জনতা অতিথি শিল্পী।
বিপ্লব বনাম বাস্তবতা
জুলাই বিপ্লব ছিল গর্জে ওঠা জনতার হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ইতিহাস।
জুলাই ঘোষণা পত্র সেই ইতিহাসের ভাষা ধার করে, কিন্তু লড়াইয়ের বদলে প্রতিশ্রুতির ফিতের প্যাকেট তৈরি করে।
ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন সেই প্রতিশ্রুতিকে ক্ষমতার প্যাকেট ডেলিভারি সিস্টেমে পরিণত করে—যেখানে জনগণ শুধু রিসিভার, প্রেরক নয়।
শেষ কথা
আমরা ইতিহাস থেকে শিখি যে বিপ্লব আসে নিচ থেকে, জনগণের হাতে। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখি—এখন বিপ্লব আসে উপরের তলা থেকে, আর যায়ও উপরের তলাতেই। জুলাই আমাদের দেশে কেবল ইতিহাসের মাস নয়—এটা স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা কাগজের বিপ্লবের যুগে বাস করছি, যেখানে আগুন নেই, আছে শুধু ঘোষণার ধোঁয়া।
-রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলামিস্ট,