কামরুল হাসান ঃ
জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামের একটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারকে বসতভিটাসহ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার পায়তারা চলছে। একটি প্রভাবশালী মহল ইতোমধ্যেই হিন্দু পরিবারটির ৯০ শতাংশ জমি জবর দখল করে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। পাশাপশি বাগানের গাছ ও পুরাতন ঘর ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট, মোটা অংকের চাঁদা দাবিসহ নানা রকম হুমকি দিয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, শ্রীপুর ইউনিয়নের ভালুকা গ্রামের স্বর্গীয় শশী মোহন দেবের পুত্র অপূর্ব মোহন দেব ও ¯’ানীয় মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মৃত বেলায়েত হোসেন গং- এর মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দ¦ন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা গ্রাম্য শালিস ও গ্রাম আদালতে বিচারও হয়েছে। এতে কোন ফয়সালা না হওয়ায় বর্তমানে আদালতে মামলা মোকাদ্দমাও চলছে। এখন অপূর্ব মোহন দেব ও ¯’ানীয় মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মৃত বেলায়েত হোসেন এর পুত্র ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের মধ্যে বিরোধ চরমে। অপূর্ব মোহন দেবের স্ত্রী ভারতী রানী দেব কিছুদিন আগে জামালপুর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এসব বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনীর নেতৃত্বে ভারতী রানী দেব ও তার পরিবারকে প্রতিনিয়তই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন সাইফুল ইসলাম। বর্তমানে মামলা পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। তাদের নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের পায়তারাও করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন সেই শিক্ষকের ক্যাভার বাহিনী ভারতী রানী পরিবার কে বসতভিটা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যা যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমতবস্থায় অসুস্থ স্বামী আর ছোট ছোট বা”চ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভারত রানী। এ বিষয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ওই নারী। সাইফুল ইসলাম গত আগস্টের আন্দোলনের পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং দলীয় প্রভাব ভাব খাটিয়ে ভারতী রাণীর ৯০ শতাংশ জমি জবর দখল করে নিয়েছে। অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, ভূয়া দলিল তৈরি করে সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভালুকা মৌজার (১ম খন্ড) সিএস খং ১১৭, ১৪৫, ১৪৮, ১৬৫ ও ১৩২ সহ অন্যান্য খতিয়ানের সর্বমোট ৪০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি পেশী শক্তির মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম ও তার ক্যাডার বাহিনী জবর দখল করে নিয়েছে । উল্লেখ্য, ভিন্ন ভিন্ন তারিখে সম্পাদিত কয়েকটি দলিলের বিবরন তুলে ধরা হলো। ১৯৪১ সালের ০৪ জুন তারিখের জামালপুর মহকুমা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল নং ৩৮৯১ যার গ্রহিতা কনক প্রভা দেব, স্বামী জগত কিশোর দেব সাং ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সেন্টাল, মহকুমা- জামালপুর। দাতা নজর সেক ও সাছু সেক, উভয় পিতা- লেবু সরকার, সাং - ঐ মৌজা-ভালুকা সি.এস খতিয়ান নং- ১৬৫, দাগ নং -৪২০ জমি ১.৩৭ একর কাতে ০.১১ শতাংশ। একই দিন অপর আরেকটি দলিলের গ্রহিতা কনক প্রভা দেব, স্বামী জগত কিশোর দেব, সাং ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সেন্টাল, মহকুমা- জামালপুর। দাতা সাছু সেক, পিতা- লেবু সরকার, সাং- ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সেন্টাল, মহকুমা- জামালপুর। মৌজা-ভালুকা, সি.এস খতিয়ান নং- ১৬৫, দাগ নং -৪২০ জমি ১.৩৭ একর কাতে ০.৪৭ শতাংশ। অপর দিকে ১৯৬৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী তারিখে সম্পাদিত টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল নং - ২৪৮৩। যার গ্রহিতা অনিমা রাণী চন্দ, স্বামী নিতাই চন্দ্র চন্দ, সাং - ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সেন্টাল, মহকুমা- জামালপুর। দাতা - কামিনী কান্ত দেব ও হেম চন্দ্র দেব, উভয় পিতা- পুঞ্জ কিশোর দেব এবং প্রফুল্ল বালা দেব, স্বামী- ধরনী কান্ত দেব, সর্ব সাং- ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সেন্ট্রাল, মহকুমা- জামালপুর। জমির পরিমান- ৩.১৯ একর, মৌজা- ভালুকা, সি.এস খতিয়ান নং- ১১৭, দাগ নং- ১৪৫, ১৪৮,১৬৫ ও ১৩২ । এ ছাড়া ১৯৮১ সালের ২০ জুলাই তারিখের জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সম্পাদিত দলিল নং- ১২৭২৫, ১২৭২৬ ও ১২৭২৭। যার গ্রহিতা- বেলায়েত হোসেন, আব্দুস সালাম, আনিছুর রহমান ও আব্দুস সাত্তার সর্ব পিতা- আশরাফ আলী, সর্ব সাং- ভালুকা পশ্চিম পাড়া, ডাকঘর- ভালুকা সে›্ট্রাল, উপজেলা ও জেলা- জামালপুর। দাতা- অনিমা রাণী চন্দ, স্বামী- নিতাই চন্দ্র চন্দ, সাং- ভালুকা, ডাকঘর- ভালুকা সে›্ট্রাল, উপজেলা ও জেলা- জামালপুর । ভালুকা মৌজার জমির পরিমান ২.৬১ একর। উল্লেখিত দলিলগুলোর বিবরনের তথ্য যাচাই বাছাই পূর্বক সঠিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক রায় প্রদানে বিজ্ঞ আদালতের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবার। নাম প্রকাশে অনি”ছুক ¯’ানীয় কয়েক জন জানান, সংখ্যালঘু ওই পরিবারের জমির কাগজপত্র সঠিক থাকলেও ক্যাডার বাহিনীর নিকট সেই কাগজ মূল্যহীন। সাইফুল ইসলাম গত বছর ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল এবং দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া দলিল তৈরি করে ভারতী রানীর ৯০ শতাংশ জমি জবর দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে আওয়ামী সরকার পতনের পর সাইফুল ইসলাম বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আবারো ওই সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারটির উপর নানা অত্যাচারসহ হুমকি প্রদান করেছে। এ বিষয়ে শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এ কে এম আজাদ বলেন, আমরা সব সময় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের পক্ষে। তবে জমি জমার বিষয় সঠিক কাগজপত্রের উপর নির্ভর করে। ভারতী রানী ও সাইফুল ইসলাম উভয়েই জমির বিষয় নিয়ে জেলা বিএনপি’র সাধারন সাম্পাদক এডভোকেট শাহ্ মো: ওয়ারেছ আলী মামুনের নিকট গিয়েছিল। তিনি ¯’ানীয় ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা হিসেবে আমাকে বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব দেন। পরে আমরা ¯’ানীয় দলীয় কার্যালয়ে দরবারে বসি। ওই দরবারে সাইফুল ইসলাম তার কাগজপত্র দেখান। কিš‘ ভারতী রানী সে সময় তার কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। সে দুই সপ্তাহের সময় নেয়। বেশ কিছুদিন পরে সে জানায়, যেহেতু আদালতে মামলা চলছে, সেহেতু আদালতে যা রায় হবে তা মেনে নিবো। এ বিষয়ে ভারতী রানী দেব বলেন, বিজ্ঞ আদালত আমার জমির কাগজপত্র যাচাই করে রায় দিলে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। এ বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত, সংশ্লিষ্ট ভূমি দপ্তর ও প্রশাসনসহ অন্যান্য দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করছি। এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এর সাথে এ প্রতিনিধি কথা বলতে চাইলে তিনি নানা অযুহাত দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন।