নিজস্ব প্রতিবেদক
বিপ্লব মানেই শুধু সরকার বদল নয়, বিপ্লব মানে একটি আদর্শিক রূপান্তরের সূচনা—একটি ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের প্রতিশ্রুতি। ইতিহাস সাক্ষী, আমাদের দেশে যখন তরুণ প্রজন্ম রাজপথে নামে, জনতার ঢল নামে রাজপথে, তখন তাদের কণ্ঠে শোনা যায় একটাই দাবি—নতুন বাংলাদেশ, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, এবং জনগণের মালিকানায় রাষ্ট্রব্যবস্থা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই বিপ্লবের যে বীজ রোপণ করা হয়েছিলো—তা কি ফল দিচ্ছে?
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে এসেও আমরা এখনো গুম-খুন, ভোট কারচুপি, বিচারহীনতা, ও প্রশাসনিক দুর্নীতির মধ্যে হেঁটে চলছি। সেই বুকে ব্যথা নিয়ে বলতে হয়—বিপ্লবের ভাষা ছিলো পুনর্গঠনের, কিন্তু বাস্তবতা যেন পুরনো শক্তিরই পুনরুৎপত্তি।
বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষ আশা করেছিলো—শাসক পরিবর্তন নয়, শাসন পদ্ধতির আমূল সংস্কার। মানুষ ভেবেছিলো—নির্বাচন হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ, প্রশাসন হবে জবাবদিহিমূলক, বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন, শিক্ষা হবে মানবিকতা ও জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত। অথচ, আজ আমরা দেখি বিচার হচ্ছে প্রভাবিত, প্রশাসন হচ্ছে দলীয়করণে আবদ্ধ, শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে রাজনীতির খেলাঘর, আর নির্বাচন হয়ে উঠছে প্রহসনের নামান্তর।
যে বিপ্লবের শপথে বলা হয়েছিলো “ক্ষমতার মালিক জনগণ”—আজ সেই জনগণই সবচেয়ে অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্র যেন কিছু গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, আর বিপ্লবের চেতনা শুয়ে আছে কোনো দেয়ালে টাঙানো ব্যানারে।
তবুও আশার কথা, ইতিহাস কখনো থেমে থাকে না। সত্যিকারের বিপ্লব কখনো ব্যর্থ হয় না—তা হয়ত কিছুদিন থেমে থাকে, আবার জেগে ওঠে নতুন প্রজন্মের চোখে।
এই মুহূর্তে দরকার আত্মসমালোচনা, সাহসী প্রশ্ন, এবং রাজনৈতিক সংস্কার। বিপ্লবকে পূর্ণতা দিতে হলে, কেবল বক্তৃতা নয়, চাই কাঠামোগত পরিবর্তন, গণতন্ত্রের বিকাশ, দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা, এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাস্তবিক উদ্যোগ।
কারণ বিপ্লব যদি পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয়, তবে তা হয় ইতিহাসের প্রতারণা।
আর এই প্রতারণা ঠেকাতে হলে আমাদেরকেই বলতে হবে—“এবার সত্যিকার অর্থে দেশ গড়ার বিপ্লব চাই।”
– আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গণঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা, জামালপুর