নিজস্ব প্রতিবেদক
২০২৪ সালের যে গণজাগরণ আমরা দেখেছি, তা নিছক একটি রাজনৈতিক দল কিংবা একটি সরকার পতনের দাবিতে নয়। বরং তা ছিল তলানিতে জমে থাকা মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, বঞ্চনা ও হতাশার বিস্ফোরণ।
এই বিপ্লব ছিল এক ধরনের জাতীয় আত্মজাগরণ—যেখানে মানুষ উপলব্ধি করেছিল, সমস্যা কেবল নেতাদের নয়, রাষ্ট্র কাঠামোর গভীরে।
সেই কাঠামো যেখানে:
প্রশাসন দলীয় অনুগত না হলে চলেনা,
বিচারব্যবস্থা স্বাধীনতা হারিয়ে বসে আছে,
আইন প্রণয়ন হয় সুবিধাভোগীদের খুশি করতে,
এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সাজানো নাটকের রূপ দেওয়া হয়।
পরিবর্তন বনাম সংস্কার
এ দেশের রাজনীতিতে আমরা বহুবার সরকার পরিবর্তন দেখেছি। কিন্তু কাঠামো পরিবর্তন? তা হয়নি। ফলাফল?
যে দল বিরোধী ছিল, ক্ষমতায় এসে তাদেরও ‘মানসিকতা’ পাল্টে যায় না।
পুলিশ, জনপ্রশাসন, আদালত, এমনকি গণমাধ্যমও একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
সাধারণ মানুষ আবারও হয়ে পড়ে দর্শক, প্রতারিত আর শোষিত।
সুতরাং ২৪-এর বিপ্লব যারা কেবল একটি সরকারের বিদায় বলে ব্যাখ্যা করেন, তারা বাস্তবতা না বোঝার ভান করছেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে মূল চেতনাকে আড়াল করছেন। কারণ এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ‘ব্যবস্থা বদলানো’।
রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানে—
আরেকটি তামাশা,
আরেকটি সাজানো নাটক,
আরেকটি ভুয়া বৈধতার ছত্রছায়ায় অপশাসনের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত।
এমন একটা দেশে নির্বাচন কতটা অর্থবহ, যেখানে:
প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়,
ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয় দলীয় ক্যাডার,
এবং ফলাফল নির্ধারণ হয় আগেভাগেই?
গণতন্ত্রের ভিত্তি শুধুই ব্যালট পেপার নয়—এর ভিত্তি হলো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, জনগণের আস্থা, ও ন্যায়ের শাসন।
২৪-এর বিপ্লব কী চেয়েছিল?
১. দখলদার মুক্ত রাষ্ট্র – যেখানে সরকারি খাস জমি, নদী, বাজার, ঘাট দখলে নেই রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের।
২. সংবিধান সংস্কার – যেন রাষ্ট্রব্যবস্থা হয় জনবান্ধব, দলীয় আধিপত্যহীন।
৩. নিরপেক্ষ প্রশাসন – যে কাজ করবে নাগরিকের সেবায়, ক্ষমতাসীনদের দাসত্বে নয়।
৪. স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা – যাতে সত্যিকার অর্থে জনগণের রায় প্রতিফলিত হয়।
৫. দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্রনীতি – যেখানে রাষ্ট্রের সম্পদ হবে জনগণের কল্যাণে ব্যয়িত, দুর্নীতিবাজের পকেটে নয়।
আজ দরকার সেই সাহস
রাষ্ট্র সংস্কার একটি কঠিন কাজ। তবুও ইতিহাস বলে, জনগণ জেগে উঠলে, সব অসম্ভব সম্ভব হয়। ২৪-এর গণজাগরণ সেই সম্ভাবনার নাম, সেই চেতনার নাম, যে চেতনা বলে—
কেবল দল বদলালে কিছু হয় না,
বদলাতে হয় কাঠামো, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রচিন্তা।
এখন আর সময় নেই লোক দেখানো ব্যবস্থার। এখন দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, সত্যিকার সংস্কার।
এখন দরকার সেই রাজনীতি, যে রাজনীতি জনতার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, যে রাজনীতি দায়িত্ব নেয়—ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়, রাষ্ট্র গঠনের জন্য।
২৪-এর বিপ্লব সেই রাজনীতির সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। সেটিকে অপচয় করলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।
– আল-আমিন মিলু
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যাশায় এক সচেতন নাগরিক
আন্দোলনের মাঠ থেকে গড়ে তুলতে চাওয়া নতুন বাংলাদেশের প্রহরী