নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকের সমাজে, রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রশাসন কিংবা সামাজিক সংগঠন—প্রতিটি স্তরে একটা অদৃশ্য কিন্তু ভয়াবহ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেটা হলো "গ্রহণযোগ্যতাকে কৌশল বানিয়ে জবরদখলের চেষ্টা"। অর্থাৎ, মানুষ যখন কোনো একটি জায়গায় ন্যায্যভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে, সেই গ্রহণযোগ্যতাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে অন্যের অধিকার, জায়গা, অবস্থান বা স্বাধীনতা জবরদখল করতে চায়। এটা শুধু অনৈতিকই নয়, বরং আত্মঘাতী।
প্রথমে যিনি গ্রহণযোগ্য ছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর আস্থা তৈরি হয়েছিলো জনতার। কিন্তু সেই আস্থাকে পুঁজি করে তিনি যখন নিজের সীমারেখা লঙ্ঘন করে, অন্যের অংশে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন—তখন সেই গ্রহণযোগ্যতা ধীরে ধীরে ঘৃণায় রূপ নেয়। মানুষ তাকে আর পথপ্রদর্শক নয়, বরং এক ‘ক্ষমতালোভী দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
জোর করে নেওয়া কিছুই স্থায়ী হয় না—তা যত কৌশলেই হোক। ইতিহাস বলেছে, মানুষ কৌশলে হয়তো সাময়িক জয় পেতে পারে, কিন্তু হৃদয়ের মসনদ জয় করতে পারে না। গ্রহণযোগ্যতা যদি হারিয়ে যায়, তাহলে ক্ষমতার আসনে বসে থেকেও মানুষ একা হয়ে পড়ে। তখন তার চারপাশে থাকে শুধুই সুযোগসন্ধানী মুখোশধারী লোক, আর জনতার হৃদয়ে জমে ওঠে তীব্র ক্ষোভ।
আজকের বাস্তবতায়, রাজনীতিতে এই চিত্রটা অনেক বেশি চোখে পড়ে। যারা জনগণের ভালোবাসা, আস্থা, ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন—তারাই কৌশল করে বিরোধীদের দমন করে, গলা টিপে ধরে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে, জনগণের সেই আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, তাদের চারপাশে আড়ম্বর থাকলেও ভিতরে ভিতরে পচন ধরছে।
আমরা ভুলে যাচ্ছি, গ্রহণযোগ্যতা হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও সম্মানের ওপর দাঁড়ানো একটি অমূল্য সম্পদ। সেটা অর্জন করা কঠিন, কিন্তু হারানো যায় চোখের পলকে। তাই কৌশল নয়, বিশ্বাস, মানবিকতা ও উদারতা দিয়েই গ্রহণযোগ্যতাকে ধরে রাখতে হয়।
জবরদখল যদি কারো কৌশল হয়, তাহলে সেই কৌশলই একদিন তার পতনের কারণ হবে। কারণ যে জায়গায় জোর চলে, সেখানে মায়া হারিয়ে যায়। আর যেখানে মায়া থাকে না, সেখানে মানুষও আর থাকে না। তখন শুধু শূন্যতা, নিঃসঙ্গতা আর ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায় বাকি থাকে।
লেখক:
আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষক
আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা, জামালপুর