নিজস্ব প্রতিবেদক
মোহাম্মদ নাসিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ১৯৭৫ সালের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলীর বড় ছেলে।
ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের সূচনা:
মোহাম্মদ নাসিমের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ছাত্রজীবনে। ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন। শুরুতে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পরে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগে যোগ দেন।
১৯৬৭ সালে তিনি এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ছাত্রলীগ মনোনীত একমাত্র নির্বাচিত প্রার্থী।
পরবর্তীতে তিনি ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদ নাসিম মুজিবনগর সরকারে কাজ করেন, যেখানে তাঁর পিতা একজন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শরণার্থীদের সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে ভূমিকা:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের পাবনা জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের সময় তিনি পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তীতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁর পিতা এম. মনসুর আলীর মৃত্যুর পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। পরে দেশে ফিরে এলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৯৮১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৭ সালে প্রচার সম্পাদক এবং ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে সংগঠন সম্পাদক হন। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে কর্মজীবন:
মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৬ সালে প্রথমবার সিরাজগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, সিরাজগঞ্জ-১ ও সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে।
তাঁর সংসদীয় ও মন্ত্রীত্ব জীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন:
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী: ১৯৯৬–২০০১ (এই সময়ে তিনি গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: ১৯৯৯–২০০১
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী: ২০১৪–২০১৯
তিনি সংসদের চিফ হুইপ এবং বিভিন্ন স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন।
জীবনের শেষ পর্ব ও মৃত্যু:
২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোহাম্মদ নাসিম অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন, কিন্তু তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রভাবশালী নেতা হিসেবে অব্যাহত থাকেন।
২০২০ সালের ১৩ জুন, ৭২ বছর বয়সে, তিনি স্ট্রোক করার পর লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।