নিজস্ব প্রতিবেদক
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বৈঠকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে, তা হলো মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার জনাব তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ। রাজনীতির মাঠে এই বৈঠক একটি বড় বার্তা বহন করছে—কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বৈঠকের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী ছিল? রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য সমঝোতা, না কি সত্যিকার অর্থেই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এক যৌথ পথ খোঁজা?
এই প্রশ্ন স্বাভাবিক। কারণ, ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে—বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় বড় বৈঠকের আড়ালে অনেক সময় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে, রাষ্ট্র বা জনগণের স্বার্থ নয়।
প্রধান উপদেষ্টা যখন একটি নির্দলীয় সরকারের দায়িত্বে আছেন, তখন তার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে সঠিক ও ন্যায়ের পথে এগিয়ে নেওয়া, যে কোনো মূল্যে ক্ষমতার পালা বদলের সহায়ক হওয়া। পক্ষান্তরে, তারেক রহমান এমন একজন রাজনৈতিক নেতা, যার পক্ষে-বিপক্ষে জনমত অনেকটা মেরুকৃত। তার সঙ্গে বৈঠক মানেই অনেক ধরনের ব্যাখ্যা, সন্দেহ, জল্পনা-কল্পনার জন্ম দেওয়া।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি রাষ্ট্রপতি পদপ্রাপ্তির জন্য আলোচনাটি হয়—তবে সেটি কি রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষ অবস্থানকে কলুষিত করবে না? একজন প্রধান উপদেষ্টা যদি ভবিষ্যতে কোনো দলের মনোনীত রাষ্ট্রপতি হওয়ার চেষ্টা করেন, তবে সেই নিরপেক্ষতা আজ থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্যদিকে, যদি সত্যি এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হয়—দুই পক্ষের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য একটি বাস্তবিক রূপরেখা তৈরি করা—তবে সেটি একটি সাহসী, যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সেটিও তখনই ফলপ্রসূ হবে, যদি তা হয় উন্মুক্ত আলোচনায়, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এবং সর্বদলীয় পরামর্শে।
তাহলে জনগণের প্রশ্ন:
বৈঠকটি কি ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য, নাকি জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য?
জনগণের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-বেদনার জায়গাগুলো কি আলোচনার টেবিলে ছিল?
সংস্কারের নামে কি আবারও কায়েমি স্বার্থের একটি নতুন চুক্তি হচ্ছে?
উপসংহার:
বাংলাদেশের মানুষ আজও একটি সৎ, নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র চায়। তারা রাষ্ট্রপতির চেয়ার নয়, চায় দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। তারা পদ নয়, চায় পদক্ষেপ। সেই পদক্ষেপ হোক সত্যিকারের রাষ্ট্র সংস্কারমূলক, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রে বাঁচতে পারে।
অতএব, বৈঠক হয়েছে, ভালো কথা। তবে এখন সময় এসেছে এই প্রশ্নের জবাব স্পষ্টভাবে দেবার—রাষ্ট্রপতি হওয়ার লোভ, না রাষ্ট্রকে বাঁচানোর অভিপ্রায়?
– আল আমিন মিলু
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক
আহ্বায়ক, গণঅধিকার পরিষদ, সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা