নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি অদ্ভুত, কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণ উক্তি ঘুরেফিরে আসছে—"পরে কি হবে, সেই পর্যন্ত বেঁচে থাকবো কিনা, সেটা পরে দেখা যাবে। আপাতত টাকা কামিয়ে নেই!"
এই বক্তব্য কোনো সাধারণ কথাবার্তা নয়। এটি হলো এক শ্রেণির বয়স্ক, ক্লান্ত কিন্তু লোভে অন্ধ নেতার শেষ রাজনৈতিক দর্শন। এটি একদিকে ব্যক্তিগত হতাশা, আরেকদিকে রাষ্ট্রীয় লুটপাটকে জায়েজ করার কৌশল। এই চিন্তাধারা প্রকাশ করে যে, তারা আর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা নয়, বরং নিজের ও নিজের গোষ্ঠীর সম্পদ সুরক্ষাই এখন একমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা।
অস্থায়ী জীবনের স্থায়ী লুণ্ঠন
এই বয়স্ক নেতাদের কাছে রাজনীতি যেন হয়ে উঠেছে শেষ বয়সে কামাইয়ের শেষ উপায়। তাদের কথাবার্তায় এমন এক প্রান্তিক মানসিকতা প্রকাশ পাচ্ছে, যেখানে সময় কম, কিন্তু চাহিদা অনেক। তাই তারা এখন আর দায়বদ্ধতা নয়, খুঁজছেন সুযোগ—ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে যতটা পারা যায়, নিজের জন্য সঞ্চয় করে নেওয়া।
এই অর্থ-লোলুপ মানসিকতার পেছনে যে বড় পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে, তা হলো—একটি নতুন স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা।
নতুন স্বৈরতন্ত্রের ছক
তারা জানে, বর্তমান ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই তারা চায়, এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যেখানে তাদের প্রশ্ন করা যাবে না, জবাবদিহি থাকবে না, বিচার হবে না।
তারা চায়—
এমন একটি নির্বাচন যা সাজানো,
এমন একটি সরকার যা নিয়ন্ত্রিত,
এমন একটি রাষ্ট্রযন্ত্র যা কেবল ক্ষমতাবানদের সেবা দেবে।
এই উদ্দেশ্যেই তারা দ্রু নির্বাচনের কথা বলছে, কিন্তু তা গণতন্ত্রের জন্য নয়—বরং দ্রুত একটি ‘বসানো সরকার’ গড়ে তুলে নিজেরা আড়ালে গিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য।
দ্রু নির্বাচন: সমাধান নাকি ফাঁদ?
এখানেই প্রশ্ন উঠে—এই ‘দ্রু নির্বাচন’ আসলে জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য, না কি একটি কুশলী কৌশল?
এটা যদি হয় প্রকৃত অর্থে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন, তবে সেটি দেশের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু যদি এটি হয় সাজানো নাটক, যার পেছনে লক্ষ্য—একটি দলীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, তবে সেটা হবে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক।
এই মুহূর্তে যা দরকার
আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে দেশকে বাঁচাতে হলে দরকার—
স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন,
বয়স্ক সুবিধাবাদী নেতৃত্বের অবসান,
এবং তরুণ, নৈতিক, জবাবদিহিমূলক নেতৃত্বের উত্থান।
রাষ্ট্র যদি কেবল গুটিকয়েক বয়স্ক লুটেরার হাতের খেলনা হয়ে যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না—না নৈতিকতা, না সম্পদ, না স্বাধীনতা।
শেষ কথা
যারা আজ বলছেন, “বাঁচলে পরে দেখা যাবে,” তারা আসলে নিজের জন্য বাঁচতে চান, দেশের জন্য নয়।
যারা আজ ‘দ্রু নির্বাচন’-এর নামে আরেকটি স্বৈরতন্ত্র আনতে চান, তারা দেশ নয়, নিজেদের বাঁচানোর নির্বাচন চায়।
আর আমাদের—জনগণের—কর্তব্য এখন একটাই:
এই লোভী রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো,
গণতন্ত্রকে বাঁচানো,
এবং নিশ্চিত করা—এই দেশ যেন কারও ব্যক্তিগত কামাইয়ের ক্ষেত্র না হয়।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক গনঅধিকার পরিষদ সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর