নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে এক ধরনের অস্বাভাবিক উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ একটি পক্ষের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই নির্বাচন শুধু জয় পাওয়ার জন্য নয়, বরং প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করার জন্য। কিন্তু একটি বিষয় আমরা বারবার ভুলে যাচ্ছি—গণতন্ত্রে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বিরোধী কণ্ঠের উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণই হচ্ছে এর প্রাণ।
ধরে নিই, এই উন্মাদনার চাপ, প্রশাসনিক আধিপত্য, ভয়ভীতি কিংবা রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে যদি আগামী নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ উল্লেখযোগ্য কোনো রাজনৈতিক শক্তি অংশ না নেয়—তাহলে কী ঘটবে?
প্রথমত, নির্বাচন হবে একপক্ষীয়। গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ অনুযায়ী, প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো নির্বাচন প্রকৃত অর্থে নির্বাচনই নয়। যদি ভোটারদের সামনে একাধিক বিকল্প না থাকে, তাহলে সেই ভোট হবে না প্রতিনিধিত্বমূলক, না হবে বৈধতার প্রতিচ্ছবি। এমন একটি নির্বাচনের ফলাফল স্বীকৃতি পাবে না জনগণের কাছে—না দেশি, না আন্তর্জাতিক মহলে।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের পরবর্তী সরকার গঠনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এই প্রশ্ন উঠবে—এই সরকার কি জনগণের প্রকৃত ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে, না কি এটি একটি সাংবিধানিক নাটকের অংশ মাত্র? এতে করে বিদেশি সম্পর্ক, বিনিয়োগ, ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তৃতীয়ত, একপক্ষীয় নির্বাচনের ফলে দেশের ভেতরেই সৃষ্টি হবে এক গভীর রাজনৈতিক শূন্যতা। বিরোধী মতকে মাঠছাড়া করা মানে শুধু একদল নয়, কোটি ভোটারের মত ও চিন্তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া। এতে করে সমাজে তৈরি হবে হতাশা, ক্ষোভ, এবং ধীরে ধীরে তা রূপ নিতে পারে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলায়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে তার ফল ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে।
চতুর্থত, এমন নির্বাচনের মাধ্যমে আসা সরকার কাঠামোগতভাবে আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারে। বিরোধী দল না থাকলে সংসদ হবে একমুখী কথাবার্তার স্থান, নীতি-নির্ধারণ হবে দলীয় স্বার্থে, আর সাধারণ মানুষের দাবি থাকবে উপেক্ষিত।
সুতরাং, যদি সত্যিই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে একটি দল ছাড়া আর কেউ নির্বাচনে না আসে—তবে সেটি শুধু গণতন্ত্রের পরাজয় নয়, বরং একটি জাতির রাজনৈতিক পরিপক্বতার চরম ব্যর্থতা। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, প্রতিযোগিতা হোক সম্মানের, সংঘর্ষের নয়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে।
গণতন্ত্র মানে সমানভাবে অংশগ্রহণ করার অধিকার। এই অধিকার যদি কেউ জোর করে কেড়ে নেয়, তবে সেটি দেশের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়াবে।
এখন কথা হলো শুধু নির্বাচনের তারিখ পাওয়া না পাওয়া আর নিজেদের সংখ্যা গরিষ্ঠের অহংকারে আসমানে না হেঠে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য করার পরিকল্পনাও থাকতে হবে।তা না হলে আপনাদের একাই নির্বাচনের মাঠে ছেড়ে দিয়ে জনগন আয়েশে নাকডেকে শান্তির ঘুম দিবে।ভোট কেন্দ্র হবে শিয়াল কুকুরের বিশ্রামের জায়গা।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর