কামরুল হাসান:
জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের তিতপল্লা মৌজার বিক্রিত জমির জাল কাগজ তৈরী করে স্থানীয় মিজানুর রহমান মিজান। ওই জমির পুন: মালিকানার দাবিতে রেকর্ড সংশোধনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করেছে পূর্ববর্তী মালিকের ওয়ারিশগণ। জাল কাগজ তৈরীর মূল হোতা মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভোগদখল করে আসতে থাকাকালীন আরওআর জরিপ আগত হলে উক্ত নালিশী জমি আব্দুল বারেকের নামে শুদ্ধভাবে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয়। পরে আব্দুল বারেকের মৃত্যুর পর এক পুত্র মিজানুর রহমান, দুই কন্যা বাছিরন ও মৌসুমী এবং স্ত্রী মেহেরুন বেওয়া জীবিত থাকেন। অতঃপর বিআরএস জরিপে আরওআর ৫০২ নং দাগটি বিআরএস ১৩২২ নং দাগে রূপান্তরিত হয়ে বিআরএস ৩৬৭ নং খতিয়ানভুক্ত হয়ে ভুল বশতঃ বিবাদীগনের পূর্ববর্তীমালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। তাই বাদীপক্ষ রেকর্ড সংশোধনের নিমিত্তে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদীপক্ষের (মিজানুর রহমান, বাছিরন ও মৌসুমী এবং মেহেরুন বেওয়া) কাছে আব্দুল বারেকের নামে যে শুদ্ধভাবে রেকর্ড হয়েছে সে সংক্রান্ত কাগজ দেখতে চাইলে তারা তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি এ বিয়য়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিস, উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা ভূমি অফিস এবং বিভাগীয় ভূমি অফিস ময়মনসিংহ, এবং কি রাজধানী ভূমি অফিস ঢাকার তেজগাঁও খোঁজ-খবর নেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুল বারেক, পিতা মৃত ছাদেক আলী এ নামে কোন জমির রেকর্ড হয় নি। তাহলে মামলার আরজিতে আব্দুল বারেকের নামে শুদ্ধভাবে রেকর্ড লিপিবদ্ধ হয় কথাটি কিভাবে উল্লেখ করেছে? আব্দুল বারেকের ছোট ভাই মিয়ার উদ্দিন, পিতা মৃত ছাদেক আলী-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তার বড় ভাই আব্দুল বারেক, তিনি মিয়ার উদ্দিন, তার ছোট ভাই আব্দুস ছোবহান ও ময়েজ উদ্দিন আর বোন জয়গুন নেছা ও রেজিয়া খাতুন বিবি এবং মা জামিরন নেছা সবাই মিলে তাদের জমির অংশ বিক্রি করেছেন। ক্রেতা হাছেন আলী সরকার, পিতা মৃত আব্দুর রহমান মন্ডল, সাং তিতপল্লা। তাহলে তার ভাইয়ের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা কিভাবে এই জমির মালিক হয়? তা তার জানা নেই। মামলার বিবাদী পক্ষের মঞ্জুরুল হককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তিনি ছোট থেকেই দেখে আসছেন যে, এই জমি তার বাবা চাষাবাদ করে আসছেন। আব্দুল বারেক কবে এই জমি চাষাবাদ করছে তা তার জানা নেই। এলাকার লোকদের জিজ্ঞাসা করে দেখেন, জানতে পারবেন কখনো কোন সময় আব্দুল বারেক এই জমি চাষাবাদ করে নি। সবাই এই কথাই বলবে। তিনি আরও বলেন- মামলার আরজিতে লেখা আছে আব্দুল বারেকের নামে শুদ্ধভাবে রেকর্ড হয়েছে। ভালো কথা, যে কাগজে লেখা আছে, সে কাগজটা তারা দেখাতে পারবে? নতুবা যে আদালতে মামলা করছে, সে আদালতেই ওই কাগজ হাজির করতে বলেন। যদি তা না দেখাতে পারে, তাহলে তার নামে মামলা করাতে তার সম্মান হানি হয়েছে। সেই সাথে ওই জাল কাগজ পত্রের সত্যতা খুঁজার পিছনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই তিনি ক্ষতিপুরণ দাবিসহ সম্মান হানির মামলা করবেন। একাধিক সূত্রে জানা যায়, মিজানুর রহমানের বাবা আব্দুল বারেক চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত ছিলেন। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। আব্দুল বারেক মারা যাবার ২০/২৫ দিন আগেও পাশের ঘরের হাতেম আলীর একটি ছাগল চুরি করেছিল। বেশ কয়েক বার চুরি করে ধরাও পড়েছিল সে। একজন চোরের ছেলে তো ডাকাত হবেই। এলাকাতে আব্দুল বারেক নামে কেউ তাকে চিনবে না। চোর বারেক বা বারেক চোরা বললে সবাই চিনবে। স্থানীয় আব্দুস সামদ, গোলাম মোস্তফা, কামাল হোসেন, আব্দুল কাদের, শাহজাহান আলী, নাছির ইকবাল ও জয়নাল আবেদীনের সাথে কথা বললে তারা সবাই একই কথা বলেন। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জাল কাগজ তৈরীর মূল হোতা মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে। ***