নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এক গভীর সন্ধিক্ষণের দিন। ‘১/১১’ নামে পরিচিত সেই দিনটিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার রাশ চলে গিয়েছিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাত থেকে অনির্বাচিত একটি সামরিকপন্থী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। তখন বলা হয়েছিল, দেশে অস্থিরতা, দুর্নীতি, রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার এবং ভেঙে পড়া প্রশাসনিক কাঠামোই দায়ী। অনেকেই বলেছিলেন—রাজনীতিবিদরা নিজেদের ব্যর্থতায় রাষ্ট্রকে এমন এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছিলেন, যেখানে জনগণ পর্যন্ত সেই অনির্বাচিত হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল।
এখন যদি আবার ঘটে ১/১১?
বর্তমান বাস্তবতায় আবার সেই প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে—যদি দেশে আরেকটি ১/১১ ঘটে, তাহলে তার দায় কাদের?
অতীতের দায়—‘যারা খেয়ে গেছে
একটি পক্ষ বলবে, যারা অতীতে শাসন করেছে, তারাই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। সুশাসনের নামে তামাশা করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে ব্যক্তিগত সম্পদে রূপান্তর করেছে।
এদের কারণে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়েছে, এবং আজকের সংকটের বীজ বপন করা হয়েছে তখনই। অতএব, তারা দায় এড়াতে পারে না।
বর্তমানের দায়—‘যারা এখন খাচ্ছে’
অন্যদিকে বলা যায়, যারা এখন খাচ্ছে তারা যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা না নেয়, বরং সেই একই পথ ধরে আগায়—তাহলে দায় এখনকার নেতৃত্বের ওপরই বর্তায়।
কারণ, এখন তারাই রাষ্ট্রের চালক এবং ভবিষ্যৎ রাস্ট্রের মালিক হয়ে গেছে। তারা বিরোধী মত দমন করছে, স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করছে, গায়ের জোরে নির্বাচনের নামে প্রহসন চালাচ্ছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গিয়ে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। রাষ্ট্র যখন জনগণের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়।
তাহলে দায় কার?
দায় আসলে একপক্ষের নয়—দায় যৌথ। যারা অতীতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে, তারাও দায়ী। আবার যারা এখন ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে স্বৈরতন্ত্র চালাচ্ছে, তারাও দায়ী।যারা ভবিষ্যৎ ক্ষমতার মালিক বলে দাবি করছেন তারাও দ্বায়ী।
এই দায় রাজনীতিবিদদের, যারা দেশকে ব্যক্তিগত বা দলীয় সম্পত্তি হিসেবে দেখেছেন। এই দায় সুশীল সমাজের, যারা সুযোগ বুঝে মুখ বন্ধ রেখেছেন। এই দায় জনগণেরও, যারা বারবার ভুল নির্বাচন করেছেন, বা চুপ থেকেছেন।
উপসংহার
‘১/১১’ ছিল একটি ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় ব্যত্যয়। আমরা যদি আবার সেই পথে হাঁটি, তাহলে দায় নিয়ে তর্ক করে কোনো লাভ নেই। আসল প্রশ্ন হলো—আমরা কি এই দেশটিকে বারবার একি খাদের কিনারায় নিয়ে যেতে চাই? নাকি শিক্ষা নিয়ে শোধরাতে চাই?
অতএব, রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ ও সংলাপ ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি। নইলে, ইতিহাস আবার নিজেকেই পূনরাবৃত্তি করবে—এবং তখন দায় নেওয়ার সুযোগ আর কারো থাকবে না।
-আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর