কামরুল হাসান:
‘মা’ অতি ক্ষুদ্র একটি শব্দ। কিন্তু এর মধুরতা, শান্তিময়তা, আবেগময়তা, মমত্বতা, আকর্ষন, ব্যাপকতা এতই ব্যাপ্ত যে, তা প্রকাশ করা অত্যন্ত দুরহ। মা-খোদার সেরা উপহার! তিনি একদিকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, অবৈতনিক উপদেষ্টা, বিশ^স্ত চিকিৎসক, নির্ভরশীল সেবিকা ও নি:স্বার্থবান পরম বন্ধু। অপরদিকে তিনি দু’কালের জন্যই পথ প্রদর্শক ও পরপারের দিশারী এবং বেহেশতের সোপান তথা পাথেয়। এতক্ষনে সুপ্রিয় পাঠক হয়তো আমার উপর ক্ষেপে আছেন। কারনটা নিশ্চয় আজকের বেখ্যাপ্পা শিরোনাম দেখে। এতে যে ক্ষেপবেন, তা আগেই আন্দাজ করছিলাম। বিষয়টা একটু খোলাসা করা দরকার। এ অধমের কথা হয়তো বিশ^াস হবে না। না হওয়ারই কথা। তাই তার আগে গ্রীসের বিখ্যাত সেই দার্শনিক সক্রেটিস-এর কথায় আসি। তিনি বলেছেন, ‘জ্ঞানই শক্তি’। তিনি জ্ঞান অর্জনের কৌশল হিসেবে বলেছেন, ‘বলবে কম, শুনবে বেশি’। অর্থাৎ বেশি বেশি কারন খুঁজবে। মানে প্রশ্ন করে করে সঠিক উত্তর, কারন ও সমাধান বের করবে। তাই পাঠকদের নিকট কয়েকটি প্রশ্ন রাখছি-এক. মা তার সন্তানদের রেখে কবে নিজে উদরপূর্তি করে খেয়েছেন? দুই. অথচ মা না খেয়ে রয়েছেন, জানতে চানতো-খেয়েছেন কি না? দেখুনতো উত্তরে তিনি কি বলেন? তিন. আপনি জানেন যে, মায়ের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই নেই। আপনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কি কি লাগবে? সেক্ষেত্রে নিশ্চয় উত্তর আসবে, কিছুই লাগবে না, তার সবই আছে। চার. আপনার সামান্য জ¦র হয়েছে, অথচ মা সারারাত জেগে আপনার পাশে বসে আছেন। এ ক্ষেত্রে তাকে বলে দেখেনতো -আপনি ঘুমাতে যান। না হলে আপনার শরীর খারাপ করবে! খেয়াল করুনতো তিনি কি বলেন? পাঁচ. মা ভালো করেই জানেন যে, তার ছেলে দোষ করেছে। অথচ- পাশের বাড়ীর কেউ এসে অভিযোগ করে বললেন, তার ছেলে এই সেই আরও অনেক দোষ করেছে। সে ক্ষেত্রে মায়ের কি ভ‚মিকা থাকে? সুপ্রিয় পাঠক নিজে নিজে উত্তর মিলিয়ে দেখুন তো? শিরোনামটা ঠিক কি না? অনেক সন্তানকে দেখেছি, যারা নিজেরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। অথচ তার মা দারুন কষ্টে আছেন। এ বিষয়ে কোন খোঁজ-খবরই নেন না। কিন্তু তার মা সন্তানের এহেন বিষয় ভুলেও অন্যের নিকট বলেন না। অথচ এই মায়ের প্রতি কোন খেয়াল না রেখে বরং আম্মার প্রতি অতিশয় যতœ-আত্তিতে মহাব্যাস্ত। এখানে মা হলেন-নিজের গর্ভধারিনী আর আম্মা হলেন-স্ত্রীর গর্ভধারিনী। সবচেয়ে বড় কথা-‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। মায়ের ঋণ শোধ করার ক্ষমতা কারোরই নেই। কবির কথায়- ‘ মায়ের এক ধার দুধের দাম/কাটিয়া গায়ের চাম/পাপুশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না।’ কবি আরও বলেছেন- ‘কর সবে ভক্তি মায়ের/ থাকতে হাতে দিন’। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ‘বিশ^ মা দিবস’ পালিত হয়। নির্দিষ্ট কোন একটি বিশেষ দিনে মাকে নিয়ে কিছু দায়সারা বন্দনা করলেই যে, মায়ের প্রতি কোন কিছু করা হবে তা কিন্তু নয়। ‘মা’ সর্বকালীন। সবশেষে বলবো-হে মালিক, তুমি আমার মিথ্যাবাদী মাকে জান্নাতবাসী কর। নইলে যে, তোমার সিফাতের মানক্ষুণœ হবে। (লেখক: মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, ফিচার ও কলাম লেখক)