নিজস্ব প্রতিবেদক
লেখক: আল আমিন মিলু
আমরা কি জাতি হিসেবে শিখি? নাকি ইতিহাস আমাদের বারবার একই জায়গায় এনে দাঁড় করায়? একসময় যেটা ছিল সংগ্রামের গল্প, আজ তা যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতার তৃষ্ণার প্রতিচ্ছবি। ফ্যাসিবাদের মতো দুঃসহ সময় পার করেও আমাদের রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজে তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন দেখা যায় না। বরং দিনকে দিন যেন সেই ফ্যাসিবাদের রূপ আরও গভীর, আরও সুসংগঠিত হয়ে ফিরে আসে।
ফ্যাসিবাদ কোনো ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি মনোভঙ্গি। এটি বিশ্বাস করে ক্ষমতাই শেষ কথা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়। যারা ভিন্নভাবে ভাবে, তাদের জন্য এর ভাষা হয় দমন-পীড়ন ও ভয়ভীতি। আমরা এই রকম বাস্তবতা থেকে পেরিয়ে এলেও জাতি হিসেবে আমরা কতটা শিখেছি?
বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আত্মজিজ্ঞাসাই সবচেয়ে জরুরি শিক্ষালয়।
আমরা হয়তো বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করি, কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতা, সহনশীলতা আর আত্মসমালোচনার যে শিক্ষা—তা গ্রহণ করি না। আমরা জাতি হিসেবে যতক্ষণ না নিজের ভুল স্বীকার করতে শিখব, ততক্ষণ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাদের প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত করতে পারবে না।
ক্ষমতার লোভ এমন এক রোগ, যা ব্যক্তি থেকে শুরু করে দল, প্রতিষ্ঠান এমনকি জাতিকেও গ্রাস করে ফেলে। আজ আমরা দেখছি, কেউ ক্ষমতায় গেলে তাকে আর কিছুই বুঝানো যায় না; আর কেউ ক্ষমতার বাইরে থাকলে, তারা হয় নির্যাতিত বা নিষ্ক্রিয়। এই চক্রই আমাদের রাজনীতি, সমাজ ও গণতন্ত্রকে করে তুলেছে ভঙ্গুর।
তাহলে করণীয় কী?
আমাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত—নিজেদের মুখোমুখি দাঁড়ানো।
আমরা কি মানবিক হতে শিখছি? ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারছি? গায়ের জোরে সত্য চাপিয়ে না দিয়ে যুক্তির জায়গা করে দিচ্ছি? যদি না পারি, তবে আমরা শুধু ফ্যাসিবাদের এক রূপ থেকে আরেক রূপে যাচ্ছি।
অতএব, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাইলে আমাদের প্রথম পাঠ হওয়া উচিত:
ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, কিন্তু এর অপব্যবহার জাতির স্থায়ী ক্ষতি করে।
আর দ্বিতীয় পাঠ: যেখানে মানুষ ভয় পায় কথা বলতে, সেখানেই ফ্যাসিবাদ মাথা তোলে।
জাতি হিসেবে আমাদের শিক্ষালয় হতে হবে—নৈতিকতা, সহনশীলতা ও আত্মসমালোচনার চর্চা।
এই শিক্ষার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক নাম নেই, কিন্তু এটাই জাতির টিকে থাকার একমাত্র পথ।
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর