নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রবাসী—এই শব্দের পেছনে লুকিয়ে থাকে হাজারো বেদনার গল্প, নিঃসঙ্গতা, আত্মত্যাগ আর চোখের অশ্রু। পরিবারের সুখের জন্য, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য অগণিত মানুষ প্রতিবছর পাড়ি জমান বিদেশে। তারা আমাদের ভাই, বন্ধু, আত্মীয়। কিন্তু আফসোস—যে দেশের জন্য তারা কষ্ট করেন, সেই দেশের কাছেই তারা বারবার অবহেলার শিকার হন।
প্রবাসীরা বিদেশে দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করেন। প্রচণ্ড গরমে, কনকনে ঠাণ্ডায়, কখনো নির্মাণস্থলে, কখনো রেস্তোরাঁয়, কিংবা কারখানায়। রাতে বিছানায় শুয়ে যখন সন্তান কিংবা মায়ের মুখ মনে পড়ে, তখন এক বুক কান্না চেপে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু দেশে ফিরে আসার সময় বিমানবন্দরে যেভাবে হয়রানির শিকার হন, তা এককথায় লজ্জাজনক।
ইয়ারপোর্টের হয়রানি—এক গ্লানিকর বাস্তবতা
দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই অনেক প্রবাসীকে চিন্তার ভাঁজে পড়তে হয়—‘ইমিগ্রেশন ঠিকমতো হবে তো? লাগেজ ঠিকমতো পাব তো? কেউ জিজ্ঞাসা না করে হয়রানি করবে না তো?’ দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রশ্ন, সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখা, লাগেজ তল্লাশির নামে সময়ক্ষেপণ এমনকি দুর্ব্যবহার প্রায় স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
অনেক প্রবাসী অভিযোগ করেন, ছোটখাটো উপহার বা বৈধভাবে কেনা জিনিস নিয়েও হয়রানির মুখে পড়তে হয়। কেউ কেউ ঘুষ না দিলে লাগেজ সময়মতো পান না। কেউ আবার বলেন, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে যতটা সম্মান, বাংলাদেশি হলে ঠিক ততটাই অপমান।
দেশে ফিরলে প্রবাসীরা কী পান?
যখন প্রবাসী দেশে ফেরেন, তারা চায় একটুখানি সম্মান, একটু ভালোবাসা, কাছের মানুষদের ভালো ব্যবহার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—তাদের দিকে তাকিয়ে অনেকে বলে, “বাহ! বিদেশ থেকে ফিরেছো, পয়সাওলা হয়ে গেছো মনে হয়।” কিছু আত্মীয়-পরিজন তো শুধুই অর্থের হিসাব মেলায়, কেউ বোঝে না, সেই মানুষটা কেমন একা ছিল, কেমন কষ্ট করেছে।
সরকারি অনেক প্রক্রিয়ায় তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তারা হয়রানির শিকার হন। অথচ এই প্রবাসীরাই বছরে ২০ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স পাঠান—যা দেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি।
প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। প্রবাসীদের সম্মান করা মানে শুধু একজন মানুষকে সম্মান করা নয়, বরং তা দেশের উন্নয়নকেই শ্রদ্ধা জানানো। সরকার ও প্রশাসনের উচিত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য আলাদা ও সম্মানজনক ব্যবস্থাপনা রাখা। পাশাপাশি সমাজে প্রবাসীদের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো উচিত।
শেষ কথা
প্রবাসীরা শুধু বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো মেশিন নয়, তারা আমাদের সমাজের, আমাদের দেশের গর্ব। আসুন, তাদের প্রতি অবহেলা নয়, সম্মান প্রদর্শন করি। ইমিগ্রেশনে হয়রানি নয়, দিই আন্তরিক অভ্যর্থনা। তাহলেই একদিন প্রবাসীরা গর্ব করে বলবে—“হ্যাঁ, আমি বাংলাদেশি। আমার দেশ আমাকে সম্মান দেয়।”
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা জামালপুর