1. live@dainikjamalpursangbad24.com : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒 : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒
  2. info@www.dainikjamalpursangbad24.com : দৈনিক জামালপুর সংবাদ 𝟐𝟒 :
শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:১৭ অপরাহ্ন

দুর্নীতি মুক্ত রাজনীতি: একমাত্র পথ প্রশাসনিক শুদ্ধির

প্রতিনিধির নাম :
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১১ মে, ২০২৫
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক 

ভূমিকা
দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতির পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, বরং নৈতিক অবক্ষয়, সমাজে অবিচার এবং নাগরিক অধিকার হরণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্নীতি একবার যখন কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রোথিত হয়, তখন সেটি যেন একটি নীরব ক্যানসারের মতো গোটা প্রশাসনিক ও সামাজিক কাঠামোকে গ্রাস করে নেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশাসন, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও দুর্নীতির চিত্র কমবেশি স্পষ্ট। এই সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্বের শুদ্ধতা ও সদিচ্ছা। কেননা, একমাত্র রাজনীতিবিদরাই পারেন গোটা ব্যবস্থাপনাকে প্রভাবিত করতে এবং দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে, যদি তারা নিজেরা দুর্নীতি মুক্ত হতে পারেন।

রাজনীতিবিদদের হাতেই নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন ও নীতি নির্ধারণ
রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা আইন প্রণয়ন করেন, বাজেট তৈরি করেন, সরকারি প্রকল্পের দিকনির্দেশনা দেন এবং প্রশাসনিক নিয়োগ ও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রমেও রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব থাকে। ফলে, তারা যদি সত্যিকারের সৎ, দায়িত্বশীল ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হন, তাহলে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অসম্ভব নয়। রাজনীতিবিদদের নৈতিকতা ও কর্মধারাই পারে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধান অস্ত্র
কোনো রাষ্ট্রে দুর্নীতি রোধে আইনি কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থাকে, তবে কার্যকর পরিবর্তন সম্ভব নয়। দুর্নীতিবিরোধী কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা বা আদালত—এদের সক্ষমতা নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর। যদি রাজনীতিবিদরা নিজেরাই দুর্নীতিতে জড়িত হন, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান শুধু নামে থাকে, কাজে নয়। কিন্তু যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৎ হয়, তখন তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়, তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করে। এমনকি কঠোর আইন প্রণয়ন করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির ব্যবস্থা করে। অতএব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূল লড়াই শুরু হয় রাজনীতিকদের আত্মশুদ্ধি দিয়ে।

উন্নত বিশ্বে দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির প্রভাব
উন্নত বিশ্বে আমরা দেখেছি, কিভাবে একদল সৎ, কর্মনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে। যেমন, সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ নিজে দুর্নীতিমুক্ত থেকে গোটা প্রশাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। আজ সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম সৎ ও স্বচ্ছ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। একইভাবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে রাজনৈতিক শুদ্ধতা প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে সেসব দেশে দুর্নীতির হার অত্যন্ত কম।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনীতির দুর্বলতা ও সম্ভাবনা
বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনীতি অনেক সময় ব্যবসা বা ক্ষমতার দখলদারিত্বের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি বা ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িয়ে পড়েন। এতে শুধু তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এবং প্রশাসনিক দুর্নীতিও প্রশ্রয় পায়। তবে এখানেই সম্ভাবনার জায়গাও রয়েছে। যদি কিছু সংখ্যক সৎ, আদর্শবান রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তবে জনগণও তাদের পাশে দাঁড়াবে। সময়ের দাবি এখন একটি নতুন ধ্যান-ধারণার রাজনীতি—যেখানে সেবার মানসিকতা, স্বচ্ছতা ও জনকল্যাণকে প্রধান বিবেচনা করা হবে।

তরুণ প্রজন্ম ও রাজনৈতিক শুদ্ধি
বর্তমান তরুণ সমাজকে রাজনীতির প্রতি উৎসাহী করে তুলতে হবে, তবে সেই রাজনীতি হতে হবে আদর্শভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত। শিক্ষিত ও প্রযুক্তি-সচেতন তরুণরা চাইলে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সুশিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা এই প্রজন্মকে একটি সৎ রাজনীতির পথে নিয়ে যেতে পারে।

উপসংহার
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোনো একটি ব্যক্তির নয়, বরং গোটা জাতির দায়িত্ব। কিন্তু এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে কেবল রাজনীতিবিদরা। প্রশাসন, আমলা কিংবা বেসরকারি খাত—সবখানেই তারা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তাই, যদি রাজনীতিবিদরা নিজেদেরকে দুর্নীতি মুক্ত রাখেন, তবে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব। রাজনীতিকদের উচিত হবে নিজেদের আদর্শিক জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা এবং প্রশাসনকে সত্যিকার অর্থে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। একমাত্র সৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বই পারে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।

আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট