জামালপুর প্রতিনিধি
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিপ্রবি) মাস্টার্সের সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা ছাত্রলীগ নেতা মো. মাসুদ রানাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
আটককৃত ছাত্রলীগ নেতা মো. মাসুদ রানা (২৬) সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখার সহ-সভাপতি। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামে। দীর্ঘদিন ক্লাসে উপস্থিত না থাকলেও তাকে বিশেষ সুবিধায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
জানা যায়, মাসুদের পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক লিটন আকন্দসহ প্রতিপক্ষ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলরুমের সামনে উপস্থিত হন। তারা দায়িত্বে থাকা শিক্ষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে বের করে দিতে বললেও তিনি তা অস্বীকার করেন এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ্ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বললে তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমোদন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা পুনরায় পরীক্ষা কক্ষের সামনে গিয়ে মাসুদ রানাকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান। এক পর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান, ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যান উপস্থিত হন। তারা মাসুদকে আজকের মতো পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও শিক্ষার্থীরা তাতে রাজি হননি। এ অবস্থায় প্রায় ঘণ্টাখানেক টানাপোড়েনের পর বিভাগের শিক্ষকরা মাসুদ রানাকে পরীক্ষাকক্ষ থেকে বের করে নিয়ে আসেন। একাডেমিক ভবনের সামনে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাসে তুলে ক্যাম্পাস ছাড়ার চেষ্টা হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তাকে একটি অটোবাইকে তুলে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে অটো থামিয়ে মাসুদকে আটক করেন। এ সময় তাকে জুতার মালা পরানোর চেষ্টা করা হলেও তা প্রতিহত করা হয়। সন্ধ্যার আগে শিক্ষার্থীরা তাকে মেলান্দহ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
আটকের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, প্রক্টর ড. সাদীকুর রহমান, বিভাগীয় চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক লিটন আকন্দ, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এ কে এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মিয়াদ ইসলাম নিয়ন, সদস্য ইফতে খায়রুল ইফতি, হুমায়ুন কবির, ছাত্রশিবির নেতা মুরসালিন ইসলাম ও ফাহাদ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মাসুদ রানা ক্যাম্পাসে নিয়মিত উপস্থিত না থাকলেও তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবহির্ভূত। যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশের কম উপস্থিতি থাকলে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয় না, সেখানে মাসুদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন—তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ চৌধুরী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত ছাত্রদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের ফল বাতিল হবে। মাসুদের ক্লাসে উপস্থিতি কম ছিল, তবে কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না দেওয়ায় তাকে একটি অটোবাইকে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অটো থামিয়ে তাকে আটক করে এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। পরবর্তীতে তার সহপাঠীরা তাকে ছাড়িয়ে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।”
মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আটক ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ রানা থানায় আছে। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
উল্লেখ, সোমবার বিকাল ৫টা দিকে সমাজকর্ম বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাকে মেলান্দহ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।